সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত সিনেমা ‘বিলডাকিনি’ নিয়ে পরিচালক ও প্রযোজকের নাম পরিবর্তনসহ বিভিন্ন প্রতারণার অভিযোগ করেছেন মঞ্জুরুল ইসলাম মেঘ নামের এক চিত্রপরিচালক। তিনি দাবি করেছেন এ সিনেমার চিত্রনাট্যকার, পরিচালক ও সহ-প্রযোজক হিসেবে তার নাম রয়েছে। অনুদানের জন্য প্রকাশিত গেজেটেও তার নাম রয়েছে।

‘কিন্তু পরে তাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে নিয়ে এ সিনেমাটি নির্মাণ করছেন প্রযোজক আব্দুল মমিন’-, এমনটা দাবি করে মেঘ তথ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতারণার অভিযোগও দিয়েছেন। সেসব বিষয়ের এখনও কোনো সুরাহা হয়নি। এরই মধ্যে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয় এ সিনেমার পরিচালক ফজলুল কবীর তুহিন। যিনি নিজেও একই অর্থবছরে সরকারি অনুদানের একটি ছবির নির্মাতা হিসেবে অন্তর্ভূক্ত রয়েছেন। গণমাধ্যমকে পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এমন অভিযোগ করেন মেঘ।

মেঘের অভিযোগ, “বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে ‘বিলডাকিনি’ সিনেমার পরিচালক হিসেবে আমার নাম নিবন্ধন করা আছে এবং সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত গেজেটেও আমার নাম আছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র অনুদান নীতিমালা অনুযায়ী অনুদানপ্রাপ্ত সিনেমার পরিচালকের নাম পরিবর্ত করা যায় না, (কলাকুশলী পরিবর্তন করা যায়) এবং নির্বাচিত চিত্রনাট্য ছাড়াও সিনেমা নির্মাণ করা যায় না। অনুদানের নির্বাচিত চিত্রনাট্য আমার রচিত এবং আমার নামে গত ৬ মে কপিরাইট করা। আইনত ‘বিলডাকিনি’ নামে অন্য কেউ সিনেমা নির্মাণ করতে পারেন না। যদি কেউ আইন অমান্য করেন এবং আমার ক্ষতি হয় তাহলে আমি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

অনুসন্ধানে দেখা গেছে উল্লেখিত তারিখে সৃজনশীল মেধা কর্ম (চলচ্চিত্রের পাণ্ডুলিপি) ক্যাটাগরিতে নিবন্ধন হয়েছে ‘বিলডাকিনি’। আর স্বত্বাধিকারী হিসেবে মনজুরুল ইসলামের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

কলাকুশলী প্রসঙ্গে মেঘ তার অভিযোগে বলেন, ‘আমি সিনেমাটির চিত্রনাট্যকার। আমি ভালো করেই জানি এই সিনেমাতে কোন অভিনেত্রীকে মানাবে। বাংলাদেশের সিনেমার উন্নয়নে এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহার করার জন্য অবশ্যই বাংলাদেশী গুণী অভিনেত্রীকে নেওয়া হবে। সম্ভাব্য কয়েকজন অভিনেত্রীর নাম মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া আছে। ভারতীয় অভিনেত্রীকে নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। সিনেমাটিতে যে নারী চরিত্র আছে, তাতে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত অভিনেত্রীকে চরিত্রের সঙ্গে মানাবে না।’

এদিকে মেঘের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য মন্ত্রণালয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিতে আছেন এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন, অভিনেতা ড. ইনামুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া। এরমধ্যে অভিনেতা ড. ইনামুল হক সম্প্রতি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ছবির বিতর্ক প্রসঙ্গে কথা বলেন ড. ইনাম। তিনি ওই সময় বলেছিলেন- ‘অনুদান কমিটিতে আমি ছিলাম। যেভাবে এসেছে সেভাবে আমরা সিনেমাটি নির্বাচন করেছিলাম। তারপরের ঘটনাগুলো আমি জানি। মনজুরুল আমাকে জানিয়েছিল। কিন্তু তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে অফিসিয়ালি আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। যেহেতু আমি জানি না, তাই আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

গণমাধ্যমকে এ অভিনেতা আরো বলেছিলেন, আমি এক পক্ষ থেকে শুনেছি। তাই মন্তব্য করতে পারছি না। তবে আমার মনে হয় সামথিং ইজ রং সামহয়ার। কারণ এতদিনে সিনেমাটির শুটিংয়ে যাওয়ার কথা ছিল।

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রযোজক আব্দুল মোমিন বলেন, ‘পরিচালক বদলের বিষয়টি আমাদের না এটা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা। তাদের কাছে মনে হয়েছে মনজুরুল মেঘ নতুন পরিচালক তাই তাকে সহায়তা করতে দিকনির্দেশনা প্রয়োজন এজন্যই কমিটি। এখানে আমার কোনো হাত নেই।’

বরাদ্দকৃত বাজেট থেকে টাকা কমিয়ে ছবি নির্মাণে চাপাচাপি প্রসঙ্গে প্রযোজক বলেন, দেখুন ছবি বানাতে যে বরাদ্দ পেয়েছি সেটাতে অর্ধেক কাজ শেষ হবে। যেহেতু আরো টাকা লগ্নি করতে হবে তাই ভালো অ্যারেজমেন্ট করেই করতে সবকিছুই করবো। যদি ছবিটি হয় তাহলে মুক্তির পর সাংবাদিকরাই সেটা দেখে বিচার করতে পারবেন।

সিনেমা শুরুর আগেই এতো বিতর্ক হলে ছবিটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রযোজক আব্দুল মোমিন বলেন, ‘ছবিটি করবো বলেই প্রথম কিস্তির টাকা নিয়ে বসে আছি। এখন ছবি না হলে সেটা ফেরত দিতে হবে। তবে আমি চাই ছবিটি হোক।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ীসহ একাধিক পরিচালক ‘অনুদানের ছবি নিয়ে এমন বিতর্ক অপেশাদারিত্বের প্রকাশ’ বলে জানিয়েছেন।

তারা বলেন, ‘অপেশাদার একজন লোক চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও কিভাবে অনুদান পায় তা বোধগম্য নয়, এটা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’

এখন সময়/শামুমো